বই আর সিনেমার যখন অনেকাংশেই মিলে যায়!

 




এই লেখায় বই আর সিনেমা দুটোরই স্পয়লার রয়েছে। স্পয়লার পাওয়ার পরও দেখার অভ্যাস থাকলে পড়তে পারেন। 



 একটা বই আর একটা সিনেমা। দুটোর মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। গল্পের ভিত্তি আর আর গল্প ছাড়া প্রায় পুরোটাই অনেকাংশে একই। সিনেমাটা হচ্ছে Blood Diamond (2006) আর বইটা হচ্ছে উইলবার স্মিথের Cry Wolf উইলবার স্মিথ আফ্রিকার ভয়ংকর সৌন্দর্য তুলে ধরতে বেশ পাকা হাতেই কিছু বই লিখেছেন। তার মিশর নিয়ে লেখা বই গুলোও দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়। কয়েকটা বই পড়েছিলাম আর একটাও খারাপ লাগেনি শুধু শেষের দিকে একটা বই একটু আগে বাড়িয়ে গিয়ে শেষ কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়ার পর মাত্র ৫০+ পৃষ্ঠা ছিলো শেষ করার বাকী তাও শেষ করতে মন চায় নি। সেতো গেলো উইলবার স্মিথের কথা। বলছিলাম সিনেমা নিয়ে। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমাটা। ১০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মুভি সেইসময় আয় করে ১৭১মিলিয়নেরও কিছু বেশি কিছু। Leonardo D'Caprio. Jenifer Connelly, Dijmon Hounsow মূল তিনটা চরিত্রে বেশ ভালো অভিনয় করেছে। এবার বলি আমার মতামত, প্রথমত সিনেমাটা আফ্রিকা নিয়ে সেজন্য অনেক বার দেখতে চেয়েছি। বিশেষত পোষ্টার ডিজাইন টা দেখে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতাম। তালিকায় অনেকদিন পড়ে আছে দেখে ডাউনলোড দিলাম। শুরু করার পর আমি পুরোই অবাক। আমি উইলবার স্মিথের ক্রাই ওলফ পড়ার সময় ভাবিও নাই এতটা মিল সহ একটা সিনেমাও আছে। 



বইয়ের গল্প একজন সাদা চামড়ার আমেরিকান অস্ত্র চোরাকারবারী থাকে নাম গ্যারেথ সোয়েলস্ যে শেষে মারা যায় গোলার আঘাতে। এখানেও আছে ড্যানি আর্চার ( লিওনার্দো ডি'ক্যাপ্রিও) যে একজন হিরা চোরাকারবারী। সেও শেষের দিকে মারা যায়। 


বলে রাখি বইয়েও তিনটা মূল চরিত্র। দুজন সাদা চামড়ার আর একজন আফ্রিকান। তো এতো গেলো বইয়ের গ্যারেথ সোয়েলস্ আর সিনেমার ড্যানি আর্চার এর কথা।


 বইয়ে দুই সাদা চামড়াধারীর একজন ছিলো নারী সাংবাদিক। বইয়ে নাম ভিকি কেম্বারওয়েল আর সিনেমায় ম্যাডি বোয়েন। আশ্চর্য ভাবে ম্যাডি বোয়েনও সাংবাদিক। মনে হলো যেন বই পড়ে কল্পনা করা লাস্যময়ী নারী ভিকি কেম্বারওয়েলের বাস্তব রুপ দেখতে পাচ্ছি পর্দায়। বইয়ে শেষে সে আফ্রিকান প্রৌঢ়বয়সী জেক বারটনের প্রেমে পড়ে শেষ মুহুর্তে বাঁচতে সক্ষম হয়। কিন্তু এখানে সে প্রেমে পড়ে ড্যানির। অবশ্যই পড়ার মতো কারণ ড্যানি ওরফে লিওনার্দো ডি'ক্যাপ্রিও সেইসময়ের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে বলে কথা 😕 যাইহোক, এখানে একটু পার্থক্য আছে। 


এরপর আশা যাক আফ্রিকার সন্তান বইয়ের জেক বারটন আর সিনেমার সলোমন ভ্যান্ডিকে নিয়ে৷ বইয়ে সে তার প্রেম গাড়ি গুলো হলেও এখানে তার পরিবার আছে। মেয়ে আছে। ছেলে আছে৷ নিজের সৌন্দর্য সুন্দরী বউ আছে অবশ্যই ম্যাডির উচিত হবে না তার প্রেমে পড়া তাই না 🥹 যাইহোক, বইয়ের মতো এখানেও সে আর ম্যাডি শেষে বেচে যায়। 



তো বললাম চরিত্র গুলোর মিলের কথা৷ এখানে আমি শুরুতে এই মিল দেখে ভেবেছিলাম শেষে নিশ্চিত ভাবে ড্যানি আর্চার মারা পড়তে যাচ্ছে আর হলোও তাই। তখন ভাবলাম হয়তো বইটাকে একটু সম্পাদনা করে সিনেমা বানিয়েছে কিন্তু শেষে উইলবার স্মিথের নাম না দেখে সে আশা টুকুও শেষ হয়। তবুও সিনেমাটা ২ ঘন্টা ২৩ মিনিট বিরক্ত লাগে নাই। সবাই ভালো অভিনয় করেছে। আর আমি ড্যানি আর ম্যাডির প্রেম দেখে ভেবেছিলাম পশ্চিমা রীতির ভালোবাসা দেখাবে কিন্তু ভ্যাগিস দেখায় নি। এখন যদি কোন ডিরেক্টর বা ফিল্ম কোম্পানি ঘোষণা দেয়, উইলবার স্মিথের ক্রাই ওলফের উপর সিনেমা বানানোর তাহলে আমি আবার দেখতে চাইবো৷ যদিও এই সিনেমায় চরিত্র ছাড়াও আরো অনেক মিল আছে। বইয়ের গল্প ইথিওপীয় আদিবাসীদের নিয়ে। আর এখানের গল্প সিয়েরা লিওনের হিরা খনির শ্রমিকদের নিয়ে৷ দুটোই আফ্রিকার।



 শেষের দিকে এক সাদাচামড়ার আমেরিকান বড় গলায় ভাষণ দিচ্ছিলো যে, কোন দেশে খনিজ সম্পদ পাওয়া গেলে সেটা সেই দেশের মানুষের অধিকার৷ কারো উচিত নয় সেটা অবৈধ ভাবে নেয়ার৷ তখন মনে মনে বলছিলাম, তোরাই কুকুরের মতো ভারত উপমহাদেশ থেকে নিয়ে যেখানেই পেরেছিস চুরি করে, ডাকাতি করে নিজেদের পকেট ভর্তি করেছিস। কোটি কোটি মানুষ মরেছে নীল চাষ করতে গিয়ে। না খেতে পেয়ে এখনোও মরছে সোমালিয়ায়। তারপরও এই ভাষণ দিতে লজ্জা হওয়া উচিত। 


পরিশেষে, সিনেমা আর বইয়ের সাদৃশ্য থাকাটা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যেটাই হোক, আমি চাই ক্রাই ওলফের উপর একটা মুভি আসুক। পুরো গল্পটা পর্দায় দেখত চাই। সাদৃশ্যের মাধ্যমে নয়। আসল গল্পের সিনেমা চাই। 



Eileen03

Comments

Popular Posts