Vikings Season 01 Review
এবার অন্য রকম কিছু দেখলাম আর সেটা নিয়েই এই লেখা। ভাইকিংস। ২০১৭-২০১৮ এর মধ্যে একবার আমার একটু দূঃসম্পর্কীয় চাচা আসেন ঘুরতে। আর তখন উনি ভাইকিংস দেখছিলেন। আমিও হালকা কয়েক ঝলক দেখেছি। কিন্তু নাম জিজ্ঞেস করলেও বলে নি। তখন এটাকে একটা রহস্য হিসেবে নিয়েছিলাম। যেটা সমাধান করবো ভেবেছি। সে টা সমাধান করেছি আরো আগেই। কয়েক বছর আগে ভাঙ্গা স্মার্টফোনে কত কিছুরই পোষ্টার দেখেছি। নিষেধাজ্ঞা থাকায় সময় হতো না দেখার। এবার এত দিন পর সেই রহস্য সমাধানের পর আরেক ধাপ এগিয়ে দেখে ফেলছি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দের আগমণ নিয়ে অসাধারণ একটা সিরিজের । র্যাগনার, সাধারণ কৃষক যে পশ্চিমে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অনেক। আস্তে আস্তে কিভাবে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় আর সৃষ্টি হয় নতুন একটা ইতিহাসের সেই গল্প নিয়েই চলে ধারাবাহিক চলেছে বছরের পর বছর। শেষ হয়েছে বছর খানেক আগে। তারপর এসেছে তার শত বছর পরের গল্পে নির্মিত আরেক টা নতুন ইতিহাস। আমি সেই শুরু থেকেই শুরু করলাম। শুরু করা নিয়ে মজার একটা ঘটনা আছে। তুর্কী টিভি সিরিজ কুরুলুস ওসমান এর ৪র্থ সিজন প্রচারিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব আসার আগে ট্রেলার দেখার পর কিছু ডাইহার্ড ফ্যান বলছিলো ওখানে নাকি ভাইকিংস রা আছে। শুনে তাজ্জব হলাম। তারপর ভাবলাম গেম অফ থ্রোনস নাহয় দেখলাম না ফ্যান্টাসি বলে এটাতো ফ্যান্টাসি নয়। ইতিহাস। দেখাই যায়। এই সিরিজে আমাকে সব চেয়ে বিমোহিত করেছে লোকেশন ও কালার গ্রেডিং। এই সিরিজের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েক গুন। সাগর আমার প্রিয়। যদি কখনো সুযোগ আসে আমি হাতছাড়া করবো না কোন মতেই। আর এই সাগর পাড়ের কিছু স্ক্যান্ডিনেভিয়ানের সমূদ্র যাত্রা নিয়ে কিছু জানছি। সেটা সত্যিই অন্য রকম ভালো লাগা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে র্যাগনার লথব্রক আর ফ্লোকির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টা। র্যাগনার চরিত্রটাই ভালোবাসার মতো। একজন যোগ্য যোদ্ধা, একজন যোগ্য স্বামী, কিংবা একজন যোগ্য পিতা সবই সে। ঠিক যেমন পরিবার সামলায় তেমনই নৌকার পালও। কখনোও আশাহত হয় না। ফ্লোকি, নৌকা মিস্ত্রি। যে গাছ দেখে বলে দিতো পারে কোনটা নৌকার জন্য ভালো। ইংল্যান্ড জয়ের প্রথম নৌকা বা প্রথম রথের কাজ করেছিলো ফ্লোকিই। মজার মানুষ। সবসময় কৌতুক করে বেড়ায় আর অসাধারণ সব কাজ করে৷ রোলো, চরিত্র টাকে পছন্দ না করে পারা যায় না। মারাত্মক পর্যায়েও সে শান্ত আর সঠিক সময়ে একদম ভয়ংকর হয়ে দেখা দেয়। আর নর্থ মিথলজিতে থর, ওডিন, লোকি এই কয়েকজনের প্রচুর প্রভাব। সমুদ্র যাত্রার আগে ও পরে থরের কাছে প্রাথনা। ভালো কিছু হলে তা থরের কৃপা। সে সব তাদের ধর্ম। আরেকটা চরিত্র অ্যাথালটান। দাস হিসেবে জীবনটা একদমই নিরাপত্তা আর স্বাধীনতা হীন। কিন্তু সেটা তার জন্য না। র্যাগনার কখনোই তাকে দাষ হিসেবে দেখে নি। ইভেন নিজের বউ ছাড়া সব সম্পত্তির সাথে ছেলে মেয়ে দুটোকেও ওর দায়িত্বে রেখে গিয়েছে। কতটা বিশ্বাস করতো এটা থেকেই অনুমান করা যায়। আর অ্যাথালটান ও তার দায়িত্ব পালন করেছে। অ্যার্ল হ্যারাল্ডসন চরিত্রটা খারাপও না ভালোও না।
এই সিরিজের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানা হলো। মার্ভেলের থর নর্থ মিথলজির দেবতা জানতাম, লোকি তার ভাই আর ওডিন তার বাপ। থরের কাণ্ড নিয়ে রোর বাংলায় পড়েছিলাম খানিক এতটুকু জানা। কিন্তু নর্থম্যান বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের সম্পর্কে জানতে কোন চেষ্টা করি নাই। সিরিজ দেখা সে কাজও হয়ে গেলো। অনেক নর্থ মিথ জানা হচ্ছে সাথে নর্থ সমাজ ব্যবস্থার অদ্ভুত সব নিয়মাবলি। অ্যাথালটানের মতো আমিও অবাক হচ্ছি আর দেখে যাচ্ছি কত কি ঘটছে। আমরা এক নই। কিন্তু ওদের আকর্ষণীয় গল্পের ঝুড়ি আছে আর আমাদের সত্যি কিছু।
কিছু নর্থ নিয়মাবলি যা সিরিজে দেখেছিঃ
১. সতীদাহ প্রথা, হিন্দুদের সতীদাহে স্ত্রীকে জ্যান্ত স্বামীর সাথে পুড়তে হয় কিন্তু নর্থ সমাজ ব্যাবস্থায় সেটা ঐচ্ছিক। চাইলে কোন দাষী বা স্ত্রী সেখানে মৃত ব্যক্তির সাথে মারা যেতে পারে যেটাকে তারা বলে মৃত্যুর পর একসাথে ভ্যালহালায় যাওয়া। প্রথমে সমস্ত দাষী ও স্ত্রীকে জিগ্যেস করা হয়। তারা কেউ কি মৃত ব্যক্তির সাথে নিজেকে উৎসর্গ করতে রাজি কিনা। যদি হয় সেক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির লাশ পোড়ানোর সময় তাকে জনসাধারণের সামনে একটা বিশেষ পানীয় দেওয়া হয় আর সেটা পান করার পর সে তার স্বামী বা মালিক কে দেখতে পায়। তারপর ছোট খাটো খঞ্জর জাতীয় দাড়ালো ছুড়ি দিয়ে তার গলা কেটে তাকেও মৃত ব্যক্তির সাথে শুইয়ে আগুন দেওয়া হয়। এই প্রসেস টা কিছুটা হিন্দুয়ানী কায়দার সাথে মিলে কিন্তু পার্থক্য আছে৷ সুতরাং বলা যাবে না কেউ কারো থেকে কপি করেছে। ব্যাপারটা ভিন্ন। হাজার মাইলের ব্যবধানের দুইটা আলাদা ব্যাপার।
২. দেবতা বিশেষত ওডিন আর তার দুই সন্তান থর ও লোকির প্রভাব। এটা এতটাই বেশি যে সাধারণ ঘটনায়ও সেটাকে থর বা লোকির কাজ বলে বসে। সেটা হোক ভালো বা খারাপ। ভ্যাল্কারিদের তারা ফেরেশতার মতো দেখে। মার্ভেলের এই চরিত্র গুলো নর্থ মিথলজি থেকে ধার করা। প্রথমে থরের নাম শুনলে ক্রিস হেমসওর্থ, লোকির কথা শুনলেই টম হিডলষ্টন এর কথা মাথায় আসতো পরে ভাবলাম এটা নর্থম্যান দের কল্পনা। মার্ভেলের নাহ।
৩, দেবতাদের নয় বছর পরপর মানুষ, গবাদি পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদী উৎসর্গ করন। ব্যাপারটা কেমন ভয়ংকর না? চোখের সামনে কারো মাথা কেটে তার রক্ত পাত্র নিয়ে মূর্তির সামনের পান হতে ফেলা হচ্ছে আর সে হাসি মুখে নিজেকে বলি দিচ্ছে। পাশাপাশি আগের রাতে হাশীশ জাতীয় পানীয় পান করে সমস্ত নারী পুরুষ উলঙ্গ হয়ে একজন পুরুষের সাথে একসাথে কয়েকজন নারী নিয়ে রাত কাটানো। বউ কারো সাথে শুলে সেটাও সমস্যা হয় না। সে সব একটা আরেকটার চেয়ে অদ্ভুত সব নিয়ম নিয়ে একটা ভিন্ন ভয়ংকর জীবনে বসবাস নর্ডিক দের।
সে অনেক কথা হলো সমাজের নিয়ম গুলি নিয়ে। এবার সিজন ১ এর শেষ টা কেমন ছিলো? রহস্যময়। এককথায় রহস্যময়। গিদা মারা গেলো যেটা একদমই আনএক্সপেক্টেড। মেয়েটার স্ক্রিন টাইম কম কিন্তু অল্পতেই মন জয় করে নিয়েছে। মিলিয়ে এই পর্বের নাম ছিলো সব পরিবর্তন (All Change) আর সত্যিই হঠাৎ এক পর্বে সব পরিবর্তন হয়ে গেলো। এবার সামনের সিজনে আবার দেখা হবে ফ্লোকি, র্যাগনার, এক চোখ, প্রিন্সেস এ্যাস্লাগ, Bjorn, জার্ল গোথ, আর লাগের্থার সাথে অ্যাথেলস্টান এরও। ২য় সিজনে আরো ভায়োলেন্স আর অসাধারণ এ্যাকশন আশা করছি। যদিও অলরেডি রিলিজড৷ তারপরও আশা করছি।
বিশেষ চরিত্রঃ ফ্লোকির রক্ষিতা হেলগা
ওদের মিলে ভালো। কাজল কালো চোখ দু'জনেরই। ফ্লোকি বোট মিস্ত্রি আর হেলগা কাজল কালো চোখ আর সোনালী চুল নিয়ে ফ্লোকির খাবারের পাশাপাশি দৈহিক দিকটাও দেখে। প্রথম বার স্ক্রিনে আসে কাপড় ছাড়া একদম উলঙ্গ। একটা সুতোও ছিলো না। পরে লাগের্থা ও তার পরিবারের আসায় কাপড় পড়ে নেয়। দেখে মনে হয় একে অপরকে ভালোবাসে। সেটা সত্যি হলে ভালোই হয়। বাংলায় কখন যেন শুনেছিলাম, কাজল কালো চোখ শব্দটা। স্মরণ নেই৷ কিন্তু যতবারই হেলগাকে দেখলাম ততবাই কথাটা মনে পড়েছে। আপসালায় ওদের সময়টা ভালোই কেটেছে। খোলা গাছের নিচে মদ আর আধা পোড়া মাংসের সাথে একটা সুন্দরী মেয়ের পাশাপাশি একটা সুঠাম ধর্মভীরু ফ্লোকি। হা হা হা
No Screenshots
Comments
Post a Comment
Let me know your opinion about my thought. I'll Consider it.